৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

Last Updated on 6 months by Shaikh Mainul Islam

সবকিছুর জন্য একটা শুরু দরকার। দরকার একটা শক্তির। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ঠিক তেমনই। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ১৮ মিনিটের ভাষণই ছিলও বাঙ্গালী জাতির যুদ্ধ করার অনুপ্রেরণা ও মানসিক শক্তি।

আজকের পোষ্টে আমরা ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। জানবো ৭ মার্চের ভাষণের মুল বিষয়বস্তু সম্পর্কে। আজকের পোস্টটি সম্পূর্ণ মন দিয়ে পরলে মুক্তিযুদ্ধে ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও উপকারিতা সম্পর্কে বুঝতে  পারবেন।

তাহলে দেরি না করে আজকের এই পোস্ট থেকে ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সহ ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু জেনে নেওয়া যাক।

৭ মার্চের ভাষণ । কি, কোথায়, কেন

১৯৪৭ সাল থেকে পশ্চিম পাকিস্না সরকারের কাছে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান একপ্রকার জিম্মি হয়ে আসছিলো। বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দরা চেষ্টা করেছেন পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র করার জন্য। কিন্তু তখন তা পারেনি। আর এই নেতৃবৃন্দের মধ্যে অন্যতম নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর পূর্ব বাংলায় আওয়ামী মুসলিম লীগ জয়লাভ করলেও যখন একের পর এক পাকিস্তান সরকার ক্ষমতা স্থানান্তর করতে টালবাহনা করছিলেন তখন বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন যুদ্ধ ছাড়া কিছুই সম্ভব না।

আরও পড়ুনঃ ৭ মার্চের পূর্ণাঙ্গ ভাষণ pdf । বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ লিখিত

এরই প্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান বর্তমান সহ্রাওরদি উদ্দানে গোটা জাতির উদ্দেশ্যর বঙ্গবন্ধু ১৮ মিনিটের একটি ভাষণ দেন। যেখানে তিনি বলেন অন্যায় সহ্য না করে প্রতিবাদ করতে হবে।

পরে পরে মাইর না খেয়ে মাইর দিতে হবে। এবং হরতাল চলমান রেখে জাতির উদ্দেশ্যে বলেন যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে।

মূলত, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণের পরেই গোটা বাঙ্গালী জাতি দেশকে রক্ষা করার জন্য যার যা ছিলও তাই নিয়ে প্রস্তুতি নিতেছিল।

এরপর ২৫ মার্চ প্রথম প্রহরে বেতার যোগে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এর পরপরই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাঙ্গালী জাতি বাংলার দামাল ছেলেরা ঝাপিয়ে পরে যুদ্ধে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।

৭ মার্চের ভাষণের কারনই সেদিন বাঙ্গালী জাতি মুক্তি যুদ্ধের জন্য একতাবদ্ধ হতে পেরেছিলেন।

পেরেছিলেন দেশের জন্য একযোগে ঝাপিয়ে পরতে। তাই এটি স্পষ্ট যে ৭ মার্চের ভাষণ ছিলও বঙ্গালির মুক্তির মুক্তি যুদ্ধের অন্যতম একটি সুচনা।

৭ মার্চের ভাষণের মূল বক্তব্য কি ছিল

আমরা ভাতে মারবো, পানিতে পারবো। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষনে বঙ্গবন্ধু এই কথা বলেছিলেন।

একথা দ্বারা তিনি বুঝিয়েছিলেন, আমাদের কাছে অনেক বেশি অস্ত্র সরঞ্জাম না থাকলেও যা আছে তাই দিয়ে শত্রুদের প্রতিহত করতে হবে।

এই কথা দ্বারা স্পষ্ট যে, ৭ মার্চের ভাষণের মুল বক্তব্য ছিলও যেকোনো ভাবেই হোক সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকে হবে।

থাকতে হবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের প্রতিহত করার তিব্র মানসিক শক্তি। কেন আমরা পারবো না, পারতেই হবে।

আর পড়ুনঃ ৭ মার্চের ভাষণ রচনা । ঐতিহাসিক ৭ মার্চ রচনা

এই ভাষণের মাধ্যমেই গোটা বাঙ্গালী জাতি এক হয়ে দেশের জন্য যুদ্ধে নামতে পেরেছে।

তাই এটি স্পষ্ট যে ৭ মার্চের ভাষণের মুল বক্তব্য ছিলও মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি মুলক মানসিক শক্তি প্রদান।

৭ মার্চের ভাষণের মূল বিষয়বস্তু

এতক্ষনে স্পষ্ট বঝা উচিত যে ৭ মার্চের মুল বিসয়মস্তু ছিলও পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের অন্যায় অত্যাচারের কথা গোটা পূর্ব পাকিস্তানিদের স্মরণ করিয়ে শরীরে রক্তের প্রবাহ জাগিয়ে যুদ্ধের জন্য এক করা।

খুব স্বাভাবিকভাবেই বঙ্গবন্ধু এই কাজটি সফলতার মধ্য দিয়ে পেরেছিলেন এই ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে।

কারণ, তিনি ৭ মার্চের ১৮ মিনিটের ভাশনের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন শুরু থেকে ১৯৭১ সালের ৬ মার্চ পর্যন্ত আমাদের সাথে করা সকল অন্যায় সমুহকে।

এজন্য স্পষ্ট যে বঙ্গবন্ধু সেদিন জাতির উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেই ভাষণের জন্যই মূলত মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ পাট প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়েছিলো।

আর যার ফলাফল আজ বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।

৭ মার্চের ভাষণের অন্যতম তাৎপর্য হচ্ছে অন্যায় অনিয়মের কথা মনে করিয়ে গোটা বাঙ্গালী জাতিকে প্রতিবাদি মনভাব তৈরি করে যুদ্ধের আহব্বান করা।

বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে এটি অন্যতম একটি সেরা পাওয়া।

৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে FAQS

প্রশ্নঃ ৭ মার্চ কি সরকারি ছুটি ?

= হ্যা, ৭ ই মার্চ সরকারি ছুটি। এই দিনে জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস পালন করা হয়।

সব জায়গায় এই দিবসটি গভির শ্রদ্ধার আথে পালন করা হয়। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই দিবসে বিভিন্ন আয়োজন করা হয়।

প্রশ্নঃ ৭ মার্চের ভাষণে কয়টি দাবি ছিল ?

= ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাশনে মূলত চারটি দাবী ছিলও।

দাবী চারটি হচ্ছে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গনতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি ঘোষণা করা।

প্রশ্নঃ ৭ মার্চ বিখ্যাত কেন ?

= ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বিখ্যাত কারণ, এই দিনে বঙ্গবন্ধু জাতির উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধের আহবান মুলক বক্তব্য দেন।

এবং এই ভাষণের মাধ্যমেই বাঙ্গালী জাতি মুক্তিযুদ্ধের জন্য আকতাবদ্ধ হয়েছিলেন।

প্রশ্নঃ ৭ মার্চের ভাষণ সর্বশেষ কোন ভাষায় অনূদিত হয় ?

= বঙ্গবন্ধুএ ৭ মার্চের ভাশঙ্কে মোট ১৩ টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়।

এর মধ্যে সর্বশেষ ভাষা হচ্ছে মাহাতো নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর কুড়মালি ভাষা।

আরও পড়ুনঃ ২১ শে ফেব্রুয়ারি কি দিবস । ২১ শে ফেব্রুয়ারি নিয়ে কিছু কথা

প্রশ্নঃ ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর স্বীকৃতি দেয় কবে ?

= ৩০ অক্টোবর ২০১৭ সালে ইউনেস্কো ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে।

৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব তাৎপর্য নিয়ে সর্বশেষ

আজকের পোষ্টে আমরা ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য জেনেছি। জেনেছি ৭ মার্চের ভাষণ কেন বিখ্যাত।

এছাড়া ৭ মার্চের ভাষণের মুল বিসয়বস্ত কি ছিলও টা জানার চেষ্টা করেছি।

আশা করছি আজকের পোস্ট থেকে ৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা পেয়েছি।

এই বিষয়ে আরও কিছু জানতে আমাদের জাতীয় ক্যাটাগরিতে প্রবেশ করে ৭ মার্চ সম্পর্কে আরও ব্লগ পরে নিন।

এছাড়া নিয়মিত আমাদের সকল ব্লগ পড়ার জন্য নিয়মিত ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। চোখ রাখুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ Dainikkantha এ।